Vogobaner Paowa Na Paowa - A bengali story

Jolchobi

ভগবানের পাওয়া না পাওয়া

অরণ্য সোম

অঙ্কুরের কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে তিন মাস ক্লাস হয়ে গেল, এখনও অব্দি সিলেবাসের কিছু বোঝেনি, পড়াশোনা কিসসু হয়নি কারণ অঙ্কুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কলেজে ঢুকে যা হয় আর কি অঙ্কুর প্রেমে পড়ল প্রথম দিনই। তারও ফার্স্ট ইয়ার, ম্যাথস অনার্স। অঙ্কুরের অঙ্ক কোন দিনই ভালো লাগেনা, অঙ্ক একটা জঘন্য সাবজেক্ট আর অঙ্কের লোকজনগুলোও যা তা রকমের একদম বিচ্ছিরি। কিন্তু হায় সব বদলে গেল নূপুরকে দেখবার পর।

সেই দিন থেকেই অঙ্কুরের হৃদয়ের ঘরে নূপুরের নাচ চলেই চলেছে। নূপুর মিক্সড সিগনাল দেয়, যা ধরা অঙ্কুরের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হয়না। মাঝে মাঝে যখন কেউ দেখেনা তখন নূপুর অঙ্কুরকে দেখে আর নিঃশব্দে কোন ম্যাজিকের মত অঙ্কুরকে দেখবার প্রশ্রয়ও দেয়। আবার সবাই যখন থাকে তখন এমন একটা ভাব করে নূপুর যেন অঙ্কুরকে ও চেনেই না, আর মাঝে মাঝে তো ইচ্ছা করে ইনসালট করে নূপুর ওকে। তখন অঙ্কুরের খুব কষ্ট হয়। ইতিহাসের ছাত্র অঙ্কুরের কাছে অঙ্ক কি কঠিন।

আর কয়েকটা সপ্তাহ তারপরেই পুজো। তার আগেই একটা হিল্লে করতে হবে অঙ্কুরকে। জানতে হবে নূপুরের মনের কথা। সাড়ে তিনটে বেজে গেছে, আজ সোমবার এখনই ফিরবে নূপুর, এই মিদ্যা পাড়ার রাস্তা দিয়ে। শেষ চোদ্দ দিন ধরে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে অঙ্কুর নূপুরের সাথে যদি একবার কথা বলা যায়। এই কদিনে নূপুর বেশির ভাগ দিনই অনান্য মেয়েদের সাথে ফিরেছে, আর দু তিন দিন ফিরেছে একা। অঙ্কুর কথা বলবে ভাবতে ভাবতেই নূপুর বেড়িয়ে গেছে। আর রাগে দুঃখে অঙ্কুর ওর সদ্য কেনা স্কুটিটার ডান কান মুচড়িয়েছে। আজও দাঁড়িয়ে আছে অঙ্কুর, ওপরে ওপরে যতই যা ভাবুক অঙ্কুর ভিতরে ভিতরে ও জানে আজও ওর দ্বারা কিছুই হবে না। অসম্ভব কথা বলা, নূপুর পাশে থাকলে এমনকি কোন কোন সময়ে ওর কথা ভাবলে অঙ্কুরের হৃদপিণ্ডটা গলার কাছে উঠে আসে, এরকম ভাবে কথা বলা যায় না। অঙ্কুর পারে না।

অঙ্কুর দেখতে পেল আজ নূপুরের সাথে ওর এক বান্ধবি আসছে। মনে মনে একবার ধুস বলে অঙ্কুর মন ভরে নূপুরকে দেখতে লাগল, ব্যাথা মনের সান্ত্বনা পুরুস্কার। নূপুরকে আজ আরও সুন্দর লাগছে। এত সুন্দর যে এরকম সুন্দর কিছু ও আজ অব্দি দেখেনি এই পৃথিবীর বুকে। একটা হলুদ চুড়িদার পড়ে আসছে নূপুর, ছোট্ট কপালে কত গুলো এলোমেলো কোঁকড়া চুল, দুটো কালো চোখ যার আকর্ষণ ক্ষমতা ব্ল্যাক হোলের থেকেও বেশি। অঙ্কুর তাকিয়ে শুধু দেখতেই থাকে। অঙ্কুরের দেখতে দেখতে মনে হল যে গোটা জগত ব্রহ্মাণ্ডকে আলো করে রেখেছে সূর্য, তবে নূপুর চাইলে আজ তার কিছুটা উজ্জলতা ধার দিতে পারে সূর্যকে।

ভগবানকে সেরকম কখনও কোন পাত্তা দেয়নি অঙ্কুর কিন্তু আজ সেই ভগবানের কাছেই মনে মনে কাতর স্বরে প্রার্থনা করল
-প্লিস ভগবান প্লিস...আজ কথা বলিয়ে দাও...বা বা কিছু একটা করো ভগবান
অঙ্কুরের প্রার্থনা চলাকালীন অঙ্কুরকে তাচ্ছিল্যর থেকেও তুচ্ছ করে বেড়িয়ে গেল নূপুর। আর সাথে সাথে প্রার্থনা থামিয়ে অঙ্কুর ভগবানকে খিস্তি করল এই বলে আমি জানতাম শালা ভগবান ফগবান কিসসু নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নূপুরকেই দেখতে থাকল অঙ্কুর। একটা অটো আসছে, হাঁট নেড়ে অটোটাকে ডেকে নূপুরের বান্ধবি চলে গেল। নূপুর দেখার আগেই অঙ্কুর দেখতে পেল এইবার নূপুরের বাস আসছে। মন খারাপ হয়ে গেল অঙ্কুরের। তাহলে তো এক্ষুনি নূপুরও চলে যাবে ওর সমস্ত রুপের ডালি নিয়ে, বাগান থেকে সব ফুল চলে গেলে প্রজাপতির যেরকম খারাপ লাগে অঙ্কুরেরও সেরকম খারাপ লাগছে। বাস এসে গেছে, নূপুর উঠবে উঠবে করছে।

বাস এসে গেছে নূপুর উঠবে উঠবে করছে আর ঠিক সেই সময়ই নূপুরের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা ধরে দেখল আসলে ওটা কোম্পানির প্রোমো ফোন। ধুত্তরি বলে ফোনটা কেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে বাসটা চোখের সামনে থেকে হুস করে বেড়িয়ে গেল। নূপুর এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে পেল অঙ্কুরকে। বেশ কিউট ছেলেটা, ভালোই লাগে নূপুরের অঙ্কুরকে। কিন্তু বড্ড ক্যাবলা আর লাজুক আর এত্ত ভিতু যে আজ অব্দি কথা বলার সাহসও হল না। এই হাঁদারামটার একটা ব্যাবস্থা করতে হবে সামনে পুজো আসছে। নিজেরই অজান্তে একটা মিষ্টি হাসি হাসল নূপুর।

অঙ্কুর দেখল নূপুর ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। এগোতে এগোতে একদম ওর স্কুটিটার সামনে চলে এসছে। স্কুটির ডান কানের ওপর অঙ্কুরের হাত আর অঙ্কুরের হাতের ওপর নূপুর হাতটা রেখে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর হাসিটা হেসে অঙ্কুরকে বলল -চালাতে পারিস তো ঠিক করে? এই ফেলে দিবিনা তো আমাকে...

ভগবান গালিটা পেল, কিন্তু ধন্যবাদটা পেল না।

সমাপ্ত

© FB.com/aranya.som.161



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~