Sonali Bikel - A bengali story

Jolchobi

সোনালী বিকেল

পারমিতা চ্যাটার্জী

হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় আজও ফেলে আসা সেই সোনালী বিকেলের আভাস পাই। সূর্য ডোবার আগের মুহূর্তে পশ্চিমাকাশে লালাভো আকাশ হাতছানি দিয়ে যেন বলে, আয় কাছে আয়। তোমার কাছে চিঠি যায়, চিঠি বাহকের হাতে তোমার চিঠি আসে। লেখা থাকে সূর্য ডোবার আগে পথের বাঁকে কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলায় আসিস কিন্তু। কোনদিন বা লেখা থাকত মাঠের পশ্চিম কোণে বকুল তলাটায় আসিস আজ দুজনে ফুচকা খাব। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সোনলী বিকেল, মায়াভরা পুকুর পারে বটের ছায়ায় বসে হজমী খাওয়া, কত সাধারণের মধ্যে খুজে পেতাম অসাধারণ ভালোবাসার মাধুর্য। একটু বড় হলে কলেজে ছুটির পর বসতাম দুজনে লা কাফেতে কফি খেতে সবার চোখের আড়ালে।
টিউশন সুরু করেছি দুজনেই তাই হাতে কফি হাউসে বসার মতন পয়সাটুকু থাকত। যেদিন মাইনে পেতাম কফির সাথে একটা কবিরাজি কাটলেট দুজনের ভাগ করে খাওয়া, তাও ছিল সুখের হাওয়া, উদাস বাতাসে দুলত আমার হলুদ আঁচল, লজ্জার আড়ালে তোমার কবিতার খাতা সামনে রেখে বলতে কেমন হল বলত? কপালে ঘামে লেপটে থাকা তোমার এলোমেলো চুলগুলো আরও ঘেমে উঠত উত্তেজনায়। যেন আমি ভালো মন্দ বলার ওপর নির্ভর করছে তোমার কবিতার ভবিষ্যৎ। তারপর একদিন বিয়ের ঠিক করল আমার বাড়ীর লোকেরা কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে তুমি আমি দুজনেই হতাশ। উদ্বিগ্ন হয়ে বললে কিছুই কি করার নেই এভাবে হারিয়ে যাবে দুটি প্রাণের ভালোবাসা? আমি বলেছিলাম চল পালিয়ে যাই, তুমি বললে কোথায় পালাবো? তোকে নিয়ে থাকব কোথায় গাছতলায়? কোন উত্তর দিতে পারলামনা।
কৃষ্ণচূড়া সাক্ষী থাকল আমাদের ভালোবাসার নীরব চোখের জলের। কালের প্রবাহে কতদিন কেটে গেছে, সবই সয়ে যায় মানুষের। ভেবেছিলাম একদিনও পারবনা অন্যকারো সাথে থাকতে কিন্তু দেখো বছরের পর বছর কেটে গেল ছেলে মেয়ে হল, ক বার আর মনে পড়ে তোমায়? না মনে পড়ে যখন রাত নিস্তব্ধ সবাই ঘুমের দেশে আমি জানলার গারদে মাথা রেখে রাতের তারা গুণি আর ভাবি কোথায় গেল আমার নীরব কবি যার কবিতার খাতা আজও আমার একান্ত গোপনে রাখা, সে তো শুনেছি একজন নামকরা লেখক নির্জন অবকাশে আমায় নিয়ে একটি কোন লেখা কি লিখেছে? মনে প্রশ্ন আসে নানারকম এই সংশয় নিয়ে গেলাম এবার বইমেলায়। দীর্ঘদিন বাইরে ছিলাম তাই ভুলেই গিয়েছিলাম বইমেলার কথা। গিয়ে বিভিন্ন স্টলে বই দেখতে দেখতে পেয়ে গেলাম তার বই। কবিতার বই খুব উতসাহ নিয়ে দেখতে গেলাম বইটি উতসর্গ কাকে করেছে দেখলাম লেখা রয়েছে আমার স্ত্রী শ্রেয়াকে। দেখে বিনা কারণেই মনটা বিষাদ হয়ে গেল ভাবলাম বইটা নেবনা তারপর নিজেই নিজেকে বোঝালাম এটাই তো বাস্তব এটাই তো হওয়া উচিত। আবার বইটা হাতে তুলে নিলাম পাতা উল্টালাম নিরাসক্ত ভাবে প্রথম কবিতাটা দেখেই চমকে উঠলাম কবিতার নাম কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বকুলতলার নীচে সেই সোনালী বিকেলগুলো।

সমাপ্ত

© FB.com/paromita.chatterjee2



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~