Prostitute - A bengali story

Jolchobi

প্রস্টিটিউট

রাহুল কোলে

"প্রশ্ন!"
"মা তুমি কোথায় কাজ করো? সেখানে রাতে কেন যেতে হয়? কারো মা বাবা তো রাতে কাজে যায় না! তুমি কেন রাতে কাজে যাও মা?"মিলির প্রশ্ন শুনে আবারো থমকে দাঁড়ায় অহনা!কি উত্তর দিবে মেয়েকে...কিভাবে বলবে সে রাতে কি কাজে বাইরে যায়! কিভাবে বলবে সে একজন পতিতা সত্য বলতে পারেনা অহনা!মিথ্যা বলে রোজকার মতো।বলে "আমি একটা কোম্পানি তে চাকুরী করি রে মা।নাইট ডিউটি তে বেশি বেতন তাই নাইট ডিউটি করি।"
ছোট্ট মিলি অভিমানী কন্ঠে বলে"বেশি বেতন লাগবেনা মা, তুমি অল্প বেতনে কাজ করবা। রাতেযেতে হবে না! রাতে একা একা আমার ভয় লাগে!" অহনা বুঝে না মেয়েকে কিভাবে বুঝাবে, কি বলে বুঝাবে!
মিথ্যা বলতে তার ভালো লাগেনা। তাও বলতে হয়! আবারো বলতে হয়!"বেশি বেতনে কাজ না করলে আমার মিলির পছন্দের স্কুল ব্যাগ টা কিভাবে কিনে দিবো? আর ওই যে প্রিন্সেস ড্রেস টা! এসবের জন্যে যে অনেক টাকা লাগে রে মা!"
মিলি এবার মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পরে,কাঁদতে কাঁদতে বলে "লাগবেনা আমার ব্যাগ লাগবেনা প্রিন্সেস ড্রেস! কিচ্ছু লাগবেনা আমার! আমার শুধু মা লাগবে!"
মেয়ের কথায় চোখে জল চলে আসে অহনার! চোখের কাজল লেপ্টে যায় চোখের জলে.... মেয়ের কপালে চুমু একে দূরে সরিয়ে দেয়...তার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। চোখের জল মুছে আবার কাজল দিলো গাড়ো করে,যেন কেঁদেছে এটা বুঝা না যায়! বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে...যেতে হবে সেই হোটেলে,যেখানে অপেক্ষা করছে তার শরীরের ক্রেতা...!
হোটেলে যেতে যেতে সে ভাবছে আর কতদিন সত্য লুকাবে মিলির কাছে! কতদিন লুকাতে পারবে সেএকজন পতিতা! শরীর বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে! মিলি বড় হয়ে যাচ্ছে! যখন সবকিছু জানবে, বুঝবে সেদিন যদি ঘৃনা করে তার মা কে! যদি মা বলে আর না ডাকে! কি করব তখন? কিভাবে বাচবে মিলিকে ছাড়া!
মিলিই তো অহনার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন! মা বাবা ভাই বোন সবকিছু ছেড়ে সৌরভের হাত ধরে বের হয়ে গেছিলো ১৭ বছর বয়সী অহনা।
কাউকে জানানোর উপায় ছিল না, কারণ তখন অবিবাহিত অহনার গর্ভে সৌরভের সন্তান!
অহনা ভয় পেয়ে গেছিলো খুব! যদি অন্য ছেলেদের মতো সৌরভ মেনে না নেয়! তখন কি হবে? কিন্তু সৌরভ মেনে নিয়েছিলো। খুব খুশি হয়েই মেনে নিয়েছিলো। কপালে চুমু একে বলেছিলো তুমি যা চাও তাই ই হবে! ঘর ছেড়ে এসে বিয়ে করেছিলো তারা। কিন্তু মাত্র চার দিনের সংসার হয়েছিলো তাদের..এক সকালে ঘুম থেকে উঠে অহনা দেখে সৌরভ পাশে নেই।সে চলে গেছে, সাথে নিয়ে গেছে অহনার আনা সব টাকাপয়সা সোনাগয়না...!
আকাশ ভেঙে পরেছিলো অহনার মাথায়! তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন সৌরভকে পায়নি, ছুটে গেছিলো মা বাবার কাছে...তাদের কাছেও ঠাই জুটেনি আর!
রাতে রাস্তার ফুটপাতে শুয়েছিলো। হঠাত কারো স্পর্শ টের পেয়ে চোখ খুলে যায় অহনার, সে দেখতে পায় চোখে লালসা নিয়ে তার দিকে হাত বাড়িয়েছে এক নরপশু!
কোনোমতে পালায় সেখান থেকে! পরদিন এক বস্তিতে ঘর ভাড়া নেয়। মানুষের বাড়ির কাজ নেয়। কিন্তু সেখানেও তার শরীরের দিকে নজর দেয় নরপশু রা!
বস্তিতে ফিরে কাঁদতে থাকে!খুব করে কাদে!চিৎকার করে কাঁদে!তার কান্নার শব্দে ঘরে পাশের ঘরের মজনু। ভাগ্যিস সেদিন বুলাছিল। তার সাথে ঘটা সবকিছু শুনে সেদিন মজনু সামলেছিলো অহনাকেকে... অহনাকে বুঝায় এই দুনিয়া কতটা কঠিন!কতটা লড়াই করে বাচতে হয়! আর ভালো থাকতে হলে খারাপ হতে হয়!এর মাঝে জন্ম নেয় মিলি!
মিলিকে ভালো রাখার জন্যে পা বাড়াতে হয় খারাপ পথে...
সেই শুরু হয়েছে পথচলা এই আধার পথে! কিন্তু এখন মিলি বড় হচ্ছে! ৭বছরে পা দিয়েছে..প্রশ্ন করা শিখেছে, মনমতো উত্তর না পেলে সন্দেহ করা শিখেছে!
কিভাবে সবকিছু সামলাবে অহনা।ভাবতে ভাবতে চলে আসে তার কর্মক্ষেত্রে...
আবাসিক হোটেলে...
হোটেলে ঢুকতেই দুলাল ম্যানেজার পান খাওয়া নোংরা দাত বের করে নোংরা ভাষায় বললো "কি রে মাগি এতো দেরি করে আসলে হবে?কাস্টমাররা যে সন্ধ্যায় চলে আসে জানিস না? যা ২০৩ নাম্বার রুমেতে চলি যা, মনোজিৎ সাব এসেছে, দু বার জিগাইসে তোর কথা!"
মনোজিৎ সাহেব শহরের নামীদামী ব্যবসায়ী!টাকা,বাড়ি,গাড়ি,বউ,সংসার,সন্তান কোনো কিছুর অভাব নেই! তারপরেও বার বার এইখানে কেন আসে, বুঝে উঠতে পারেনা অহনা!
ওর বুঝেই বা কি লাভ ওর কাজ রাতে কাস্টমারকে খুশি করা,সকালে টাকা নিয়ে চলে যাওয়া, ব্যস এটুকুই!
দ্রুত পায়ে ২০৩ নাম্বার রুমের দিকে হাটতে থাকে অহনা।দোতলায় উঠার সময় হোচট খেয়ে পায়ে খুবব্যথা পায়! কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় তার নেই,দেরি হয়ে যাবে!কাস্টমার রাগ করলে তার কপাল খারাপ আছে!
এমনিতেই দুলাল কথায় কথায় টাকা কাটে!সে ব্যথা নিয়েই ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে গেলো ২০৩ নাম্বার রুমে...
রুমে ঢুকতেই মনোজিৎ সাহেব টেনে নিলো কাছে, ফেলে দিলো শাড়ির আচল!পায়ের ব্যথা উপেক্ষা করে বেড়ে উঠলো অনিচ্ছায় মিলনের ব্যথা...অহনা খামচে ধরলো বিছানার চাদর!
ভোর হতেই ম্যানেজারের কাছে নিজের টাকা চাইতেই দুলাল জানালো মনোজিৎ সাহেবজানিয়েছে রাত্রে না কি ব্যথায় ন্যাকামি করা হচ্ছিলো, তাই আজ আর টাকা পাবেনা সে! অহনার,মনে প্রশ্ন এলো, মানুষ এরকম বিচিত্রও হয়?
আগের কিছু পাওয়া ছিল,তা নিয়ে তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে গেলো হোটেল থেকে।সকালের আলো ফোটার আগেই তাকে বাসায় ফিরতে হবে। সে চায় ঘুম থেকে উঠে মিলি তাকে কাছে দেখুক! যেন সে বলতে পারে সে রাতেই ফিরেছে, যখন মিলি ঘুমাচ্ছিলো! যেন মিলি আবার কোনো প্রশ্ন করতে না পারে...মিলির প্রশ্ন যে তার কলিজায় লাগে!
"আজ আমি স্কুলে যাবোনা মা"-মিলি বললো...অহনা তাড়াহুড়া করে মেয়ের কপালে,গলায় হাত দিয়ে দেখাতে লাগলো জ্বর এসেছে কি না..."কি রে মা শরীর খারাপ না কি?"
মিলি খিলখিলিয়ে হেসে বললো "ইশ মা,তুমি যে কেন এত্ত চিন্তা করো আমার!আমি তো এক্কেবারে ঠিক আছি।আজ স্কুলে যাবোনা কারণ আজ তো মিতুর জন্মদিন,ওর বাড়িতে আমাদের সবার নিমত্রন।তোমারও!"
অহনা বললো "এভাবে স্কুল বাদ দিয়ে জন্মদিনে যেতে হবে না!যা স্কুলে যা!তার লেখাপড়ার জন্যে আমি দিন রাত গতর খাটাচ্ছি,আর সে মহারাণী জন্মদিনে ফুর্তি করতে যাবে!যা বলছিনা,যা স্কুল যা!"
মিলির মুখের হাসি মলিন হয়ে গেলো!সে ছোট্ট করে বললো "আচ্ছা মা।"ওর মলিন মুখটা দেখে অহনার খুব খারাপ লাগলো!
ইশ রে, মেয়েটাকে এভাবে না বললেও হতো!ছোট্ট মেয়ে,একটু হাসি আনন্দ তো করতে চাইবেই। এটা ভেবে অহনা মিলিকে বললো "থাক আজ আর স্কুল যেতে হবেনা, চল তোর বান্ধবীর বাড়ি যাই"
মিলি আবারও পদ্মফুলের মতো হাসিতে ফুটে উঠলো...মা মেয়ে হাসিখুশি হয়ে গেলো মিলির বান্ধবীর বাড়ি।
বাড়ি তো নয়, যেন বিশাল মহল!তার ওপর এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে শুধু দেখতেই মন চাচ্ছে...
আমন্ত্রণ পত্র দেখিয়ে ভেতরে ঢুকলো অহনা আর মিলি।ঢুকতেই মিতু দৌড়ে এসে জাপটে ধরলো মিলিকে..."থ্যাংক ইউ ফর কামিং!লাভিউ মিলি!"
মিলিও বললো "লাভিউ টু!"অহনার মনে পরে গেলো রজনীর কথা।রজনী ছিল ওর প্রিয় বান্ধবী।সারাদিন একসাথে থাকতো,খেলতো,স্কুল যেতো,গল্প করতো।দুজনার মিল দেখে সবাই বলতো "তোরা দুজন এক বাড়িতে বিয়ে করিস!খুব জমবে!"
কে জানে আজ রজনী কোথায় আছে...কেমন আছে! এর মাঝেই মিতুর মা বাবা এলো। মিলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো মিতু..."এটা আমার বেস্টফ্রেন্ড পাপা,ও খুব ভালো।আমাকে সব ম্যাথম্যাটিকসে হেল্প করে।আর এটা মিলির মা।অহনা আন্টি।আমাকে অনেক ভালবাসে,নুডুলস রান্না করে পাঠিয়েছিলো আমার জন্যে!"
"চুপ করো মিতু!"চিৎকার দিয়ে উঠলেন মিতুর বাবা...মনোজিৎ সাহেব!
মিতু ভয় পেয়ে গেলো! মিতুর মা প্রশ্ন করলো"কি হয়েছে? এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?মেয়েটার আজ জন্মদিন.....!"
কথা শেষ না হতেই মনোজিৎ সাহেব অহনাকে দেখিয়ে বললেন"এই প্রস্টিটিউটের মেয়ের সাথে আমাদের মেয়ে বন্ধুত্ব করে কিভাবে!?রাতের আধারে টাকার জন্যে নষ্টামো করে দিনের বেলায় ভদ্র সেজে ঘুরা হয় তাইনা!?বের হ,এক্ষুণি বের হ আমার বাড়ি থেকে!"
আশেপাশের সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে।মিলি প্রশ্ন করলো "মা আংকেল এসব কি বলছে?প্রস্টিটিউট কি মা!?বলো না মা!"
অহনা উত্তর দিলো"যে মায়ের কাছে বাচ্চাকে খাওয়ানোর টাকা থাকেনা,লেখাপড়ার টাকা থাকেনা,জীবনে বেচে থাকার জন্যে টাকা থাকেনা,কোথাও কোনো কাজ পায় না...সেই মায়েরা রাত্রেবেলা কাজে যায়। সারা রাত কাজ করে সকালবেলা টাকা আনে।সেই টাকায় নিজেদের জীবন নির্বাহ করে,পেটের জন্যে ভাত আর শরীরের জন্যে কাপড়ের যোগান দেয়। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালায়,তাদেরকে প্রস্টিটিউট বলে।"
চারিপাশের গুণগুণ বন্ধ হয়ে নিরবতা ছেয়ে গেছে...কেউ একটা কথাও বলছে না!অহনার চোখে জল। মিলির চোখেও জল..অহনা মিলির চোখের জল মুছে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে মনোজিৎ সাহেব কে বললো"গতরাতের কাজের টাকা টা দেন নি, সেটা আর দিতে হবে না,টাকাটা দিয়ে আপনার মেয়েকে একটা উপহার কিনে দেবেন।"
এইবার মিতু প্রশ্ন করলো"বাবা গতরাতের কিসের টাকা? আন্টি তোমার কাছে টাকা পাবে কেন বাবা?আন্টির রাতের কাজে কি তুমিও ছিলে? বলো না বাবা তুমিও কি আন্টির মতো কাজ করে আমাকে লেখাপড়া করাও? তুমিও কি প্রস্টিটিউট!?"

সমাপ্ত

© FB.com/rahul.koley.1



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~