আজ পৌষ পার্বণ! কত আনন্দের একটা দিন। পাশের বাড়িতে কত হৈচৈ! পিঠে বানানোর ধুম পড়ে গেছে। মমতা চুপচাপ বসেছিল। তার বাড়িতে কোনো সাড়াশব্দ নেই। সব চুপচাপ! কেমন গম্ভীর পরিবেশ! কিন্তু এমনটা ছিল না গতবছরও। গত বছর এ সময় বাড়িতে কত লোকজন এসেছিল। কি মজা! মমতা, মেজোজা সুনিতা ও ননদ বিশাখার সাথে মিলে পিঠে বানাতে বসেছিল। স্বামী হরনাথবাবু বাজারে গিয়েছিলেন। বড়ো ছেলে অমর কলেজে গিয়েছিল। ছোট ছেলে সমর বাড়িতেই ছিল। কত রকমের পিঠে বানিয়ে থালায় সাজিয়ে রাখা হচ্ছিল। অমরের পছন্দ নারকেলের নাড়ু, দুধপুলি। মমতা বড়োছেলেকে খুব ভালোবাসেন। তার পছন্দের সব পিঠে বানিয়েছেন। ছেলের জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন। ডান চোখটা বার বার পিট পিট করছিল। মনে ভয় হচ্ছিল। এত দেরি হয়ে গেল, ছেলে আজও ফেরে নি। খুব চিন্তা হচ্ছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো কিন্তু ছেলে ফিরলো না। শেষে রাতে থানা থেকে খবর আসে। অমর নেই! পথ দুর্ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়! থালাসুদ্ধ সমস্ত পিঠেগুলো মমতার হাত থেকে পড়ে যায়। সব শেষ! পৌষ পার্বণের দিন বাড়ির বড়ো ছেলে চলে গেল! পৌষ পার্বণ এলেই মমতার চোখে পুরোনো স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে। এই আনন্দ উৎসবের দিনটিতেও মন কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আজকের দিনটাতে তার সন্তান চিরতরে মেঘের দেশে চলে গিয়েছিল। এ দুঃখ তিনি আমৃত্যু ভুলতে পারবেন না। স্বামী-সন্তানের আড়ালে চোখের জল মুছে ফেলেন। ধীরে ধীরে উঠে পড়ে। অমরের ছবিটা শাড়ির আঁচল দিয়ে পরিস্কার করে দেন। এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও মাতৃহৃদয়ে তার স্মৃতি চিরকাল জ্বলজ্বল করবে।
সমাপ্ত
© FB.com/nurjahan.khatun.92167