Ojuhat - A bengali story

Jolchobi

অজুহাত

ত্রিদিবেশ দাশ

বোম্বেতে কাল রাত থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আজও কমার কোন লক্ষণ নেই। সকাল থেকেই অফিসের ফোনে ক্রমাগত বিপ বিপ মেসেজ আসছে। জানতাম কি, তবু খুলে দেখলাম। কেউ বলেছে স্যার বরিভেলির পর ট্রেন চলছে না। মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ বলেছে আন্ধেরিতে ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে, আজ আসতে পারব না। কেউ বলেছে বউয়ের বড় জ্বর। চোখ আটকে গেল একজনের মেসেজে - ছেলের অস্থানে ফোড়া হয়েছে, বড় কষ্ট পাচ্ছে। এখুনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। মুচকি হাসলাম, মনে পড়ে গেল নিজের কথা
আমার প্রথম চাকরী ছিল লেক মার্কেটের কাছে। ডোমজুর থেকে বহুদূর। তখনো গা থেকে ছাত্র জীবনের গন্ধ যায় নি। মাঝে মাঝে সকালে উঠে মনে হত আজ আর অফিস যাব না, ডুব দিতাম। কিন্তু দ্রুত বুঝলাম এক অজুহাত বার বার চলে না। তাছাড়া দেখলাম পাতি অজুহাত বস খাচ্ছেনও না। আমিও হাল ছাড়ব না। একদিন অফিস কামাই করে বলেছিলাম আজ মানিব্যাগ নিতে ভুলে গিয়েছিলাম, বাস থেকে মাঝরাস্তায় নাবিয়ে দিল। বস হাসতে গিয়েও নিজেকে সামলে গম্ভীর হয়ে গেলেন। পরের বার বললাম ডোমজুরে বন্যা, সরস্বতী নদী ভেসে গিয়েছে। বাস স্টপ জলের নিচে। নদী টদি শুনে অফিসে সবাই চমকাল। কিছুদিন পরে সত্যিই ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছিল, বাস টাস কম। কিন্তু এটা হয়ে গেছে। অনেক ভেবে বসকে ফোন করলাম - দাদুর শরীর ভীষণ খারাপ, বলতে গেলে দিন গোনা। (আজ এইখানে সেই বৃদ্ধের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই)। আজ বাড়িতে উকিল আসছে, উইল করতে। বস খিঁচিয়ে উঠে বলেছিলেন তা তুমি সেখানে কি করবে? বড়রা থাকবে, উকিল থাকবে। বলেছিলাম, না থাকলে যদি কিছুই না পাই? দাদুর পায়ের কাছে বসে থাকব সারাক্ষণ।

পরের দিন অফিস যেতেই সবাই বলছে কিরে, কি পেলি? আমি তো ততক্ষণে সব ভুলে মেরে দিয়েছি। বললাম কিসের কি পেলাম? আর যায় কোথায়! তবে কল্পনাশক্তি যে কতদূর যেতে পারে, শুনলাম গিন্নীর কাছ থেকে। তাদের স্কুলের এক স্টাফ কামাই করার অজুহাত হিসাবে বলেছিল বাড়িতে কুমির ঢুকে পড়েছে, দরজার কাছে অপেক্ষা করছে। ভয়ে কেউ বেরোতেই পারছে না! মোক্ষম, না?

সমাপ্ত

© FB.com/tridibesh.das



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~