আজ সকাল থেকে অপাদের ফ্ল্যাটে তুমুল ব্যস্ততা। এক সপ্তাহ ধরে সব কেনাকাটা হয়েছে আজকের জন্য। ঠাম্মি, দিদু, দাদুন সবাই এসে গেছে অপাদের ফ্ল্যাটে। আজ ভাইফোঁটা। তেরো বছরের অপা আজ প্রথম ভাইফোঁটা দেবে পাঁচ বছরের তোজোকে। ভাই না থাকার জন্য ছোটবেলায় দাদুনকেই ফোঁটা দিত অপা। আর ভাই হবার পর থেকে শুধু অপেক্ষা করেছে কবে ভাইয়ের পাঁচ বছর হবে। ভাইকে সাজিয়ে গুছিয়ে ফোঁটা দেবে অপা।
তোজোও খুব খুশি আজ। সকাল সকাল স্নান করিয়ে দিয়েছে মাম্মাম। সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরে বাবুমশাই সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিকওদিক।
বাবানও আজ চেম্বারে যায় নি। তোজো আর অপার সাথে ঘর সাজাচ্ছে। বাবান, মাম্মাম, ঠাম্মি, দিদু, দাদান সব্বাইকে একসাথে পেয়ে দারুণ খুশি দুই ভাইবোন।
সব সাজানো শেষ। অপা এবার স্নান করে শাড়ি পরে ফোঁটা দেবে তোজোকে। আনন্দে লাফাতে লাফাতে স্নান করতে যায় অপা। কিন্তু বাথরুমে ঢুকে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় ওর। ফ্রকের নীচ দিয়ে চুয়ে পড়ছে রক্ত। এটা কিসের রক্ত জানে অপা।
মাম্মামের স্কুলে একটা কম্পানি থেকে ক্যাম্পেইন হয়েছিল আগের বছর। সেখানে গিয়েছিল অপা। অপা আর ছোট নেই এটা তারই এক প্রমাণ। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। মাম্মামই তো বলেছিল ক্লাসের সব মেয়েদের সেই প্রোগ্রাম এ। এটা স্বাভাবিক একটা ঘটনা। তবুও প্রথমবার এরকম দেখে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল অপা। একটু পরেই স্বাভাবিক হয়ে মাম্মামকে ডাকে।
শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে অপা। আজ ভাইকে ফোঁটা দিতে পারবে না ও। ও নাকি অচ্ছুৎ এখন। শুভ কোনো কাজে হাত দিতে নেই। ভাইয়ের মঙ্গল কামনার ফোঁটাও দেওয়া নিষিদ্ধ। তাহলে কেন মাম্মাম ক্লাসে বলেছিল এটা মেয়েদের স্বাভাবিক একটা শারীরবৃত্তীয় ঘটনা? কেন এখন তাহলে মাম্মাম দরজার বাইরে থেকে বলে গেল ও আর ফোঁটা দেবে না ভাইকে? কেন বাইরে ঠাম্মি,দিদু তোজোকে বোঝাচ্ছে দিভাই এর শরীর টা হঠাৎ খারাপ করেছে তাই আর ফোঁটা দিতে পারবে না? কেন বাবান কিচ্ছু বলছে না কাউকে?
উত্তর খোঁজে অপা। শাওয়ারের জলে ধুয়ে যেতে থাকে অপার নোনতা হয়ে যাওয়া ভাইফোঁটার স্বপ্ন।
সমাপ্ত
© FB.com/baishakhi.bhattacharjee.714