ফুলশয্যার খাটে বসে আছে অভিসিক্তা। বর্তমানে মিসেস অভিসিক্তা সেন। ব্যাঙ্কের উচ্চ পদস্থ কর্মী অভিমন্যু সেনের নবপরিণীতা স্ত্রী। অভিসিক্তা নিজেও একটি নামী সংস্থায় কর্মরতা, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
খাটটাতো হেবি সাজিয়েছে এরা-- মনে মনে ভাবছে অভিসিক্তা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে। অবশ্য সবই বেকার, কে আর ফুলশয্যা করছে এই খাটে। অভিমন্যু এলেই সব ক্লিয়ারলি জানিয়ে দেবে তাকে।অত সতীপনা সে করতে পারবে না। এই বিয়ে ব্যাপারটাই তো তার পছন্দের নয়। কিন্তু মা-বাবার প্রতিদিনের কান্নাকাটি, জেদ, অভিমান, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং এর কাছে নতিস্বীকার করতেই হল তাকে। কিন্তু তা বলে বিয়েটা এত সহজে মেনে নেয়ার পাত্রী সে নয়। হঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ পড়ল।
"আসতে পারি?"অভিমন্যুর গলা।
"হ্যাঁ অবশ্যই, নিজের রুমে আসবেন তাও অন্যের অনুমতি নিয়ে!"
"কি করব বলুন বিবাহিত পুরুষের তো পদে পদে বিপত্তি"--কৌতুকের সুর অভিমন্যুর।
"বিয়ে করে বিপদ বাড়াতে কে বলে"--মুখ বেঁকিয়ে বলল অভিসিক্তা।
"বলার লোকের অভাব আছে মনে করেন, যতক্ষণ না কোন হতভাগা ব্যাচেলারকে সংসারের জোয়াল এ বলদের মত লাগাতে পারে ততক্ষণ এনাদের শান্তি নেই। ভাবখানা এই দেখো কেমন লাগে বাছাধন!"--বলতে বলতে দরজাটা বন্ধ করল অভিমন্যু।
'বেশ রসিক লোক তো' মনে মনে ভাবে অভিসিক্তা--"দেখুন আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল আমার"।
"হ্যাঁ অবশ্যই, আপনার কথাই তো শুনব এবার থেকে সারা জীবন। আপনি বলে নিন তারপর আমিও কিছু বলব।"
"আপনিই তবে আগে বলুন, আমি শুনি।"
"না না তা কি করে হয়, স্ত্রীজাতির অধিকার সর্বাগ্রে।"
"বেশ আমিই আগে বলছি। আমি একজনকে ভালবাসি।তাই আপনাকে তেমন সময় দেওয়া সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।"
"এ কি!কি অদ্ভুত মিল আমাদের!"-আঁতকে উঠে অভিমন্যু বলে।
"এ্যাঁ মিল!!"- ঘাবড়ে যায় অভিসিক্তা।
"আমিও তো ঠিক এটাই বলতে যাচ্ছিলাম। আমিও ভালবাসি একজনকে।"
"মানেটা কি এসবের? অন্য কাউকে ভালোবাসেন তো আমাকে কেন বিয়ে করলেন? ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি?"--রেগে গিয়ে বলে অভিসিক্তা।
"ইয়ে মানে বাড়ির চাপে.. "- আমতা আমতা করতে থাকে অভিমন্যু।
"বাড়ির চাপ মানে? আপনার আবার কিসের বাড়ির চাপ? মেয়ে নাকি আপনি? নিজে এত বড় চাকরি করেন অথচ নিজের পছন্দের মানুষ কে বিয়ে করতে পারলেন না? এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?"
"মা বাবার কথা অমান্য করার সাহস হলনা আর কি"-মাথা নীচু করে অভিমন্যু বলল--"এবার আপনার কারণ টা যদি বলতেন…"
"আমার…আমার ও তো সেই একই"--কথা খুঁজে পায়না অভিসিক্তা। তবে হার মানার পাত্রীও সে নয়।বলে-"দেখুন প্রেম যদি থাকেও এখন সেটা অতীত। বুঝেছেন? বিয়ে যখন করতে পেরেছেন তখন আগের স্মৃতি ভুলতেও পারবেন।"
"তা এটা কি শুধু আমার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে নাকি আপনার ক্ষেত্রেও?"--আস্তে করে অভিমন্যু বলে।
"হলে দুজনের জন্য এক নিয়মই হবে। আলাদা তো হতে পারে না"।
ইস্ কি প্যাঁচেই না ফেলল লোকটা তাকে। কি অদ্ভুত মিল তাদের দুজনের। কি ভেবেছিল সে আর কি হল এটা। এতদিনের চিন্তা ভাবনা এক নিমেষেই যেন বদলে গেল। সত্যিই তো বিয়ে যখন করতে পেরেছে তবে ভুলতে সেও পারবে।আর বিয়ে করে এনে বৌকে প্রেমিকার কথা বলে অপমান করা...না,বরের এই ধৃষ্টতা সে কোনোমতেই সহ্য করবে না। তার জন্য যদি আবেশকে ছাড়তেও হয় তাও সে রাজি। তবু বরের মন থেকে তার এক্সকে সে সরাবেই। মনস্থির করে নিল মিসেস অভিমন্যু।
আর এদিকে অভিমন্যুর মনের অবস্থা কেমন? সে ভাবছে যাক প্ল্যানটা বোধহয় সাকসেসফুল হল। সে বেচারির কোনো দিন কোনো প্রেমিকাই ছিল না। মনে অনেক স্বপ্ন সাজিয়ে বিয়ে করতে আসছিল। হঠাৎ তাল কাটল। গাড়িতে বসেই ম্যাসেজ পেল তার হবু স্ত্রীর প্রেমিকের। তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য কিছু একসাথে তোলা ফটো ও পাঠিয়েছিল আবেশ। কিন্তু এতটা এগিয়ে আর পিছু হটতে চায়নি অভিমন্যু। স্ত্রীর মন থেকে অতীত মোছাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়ে ছিল মনে মনে। সেই জন্যই আজকের এই মিথ্যাচারণ। মনের মিল তো সবসময় এমনিই হয়ে যায় না মিল করেই নিতে হয় বেশিরভাগ সময়।
সমাপ্ত
© FB.com/sayani.mandal.796