জানুয়ারি মাসের হাড়কাঁপানো এক শীতের রাত। আজ পড়িয়ে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। আজ জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। তাই রাস্তাঘাট অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশ অনেকটাই শুনশান। বড় রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে হাইস্পিডে মালবাহী লরি চলে যাচ্ছে। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। বড় রাস্তা পেরিয়ে আমাদের পাড়ার রাস্তায় প্রবেশ করতে মিনিট পনের সময় লাগল। হুডির ফাঁকফোকর দিয়ে বরফ হাওয়া শরীরখানা কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। পাড়ার অধিকাংশ দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে আজ। রাস্তা ফাঁকা জনমানবশূন্য। ভাবলাম একটা সিগারেট ধরিয়ে বাকি পথটুকু পেরিয়ে যাব। এদিককার রাস্তার স্ট্রিট লাইটগুলো বিগড়েছে। ফলে গভীর অন্ধকারের মধ্যে দেখলাম সিগারেটের দোকানের একটা পাল্লা খোলা। একপ্যাকেট সিগারেট কিনে একটু এগিয়ে দেখি লাইটারটা কোচিংয়েই ফেলে এসেছি। কপালটাই খারাপ আজ। আবার দোকানের দিকে যাব এমন সময় দেখি তিন চার জন ভদ্রলোক আপাদমস্তক চাদরে মুড়ে রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে জটলা করছে। তাদের মধ্যে একজনের হাতে বিড়ির আগুন দেখে খানিক নিশ্চিন্ত হলাম। গাঢ় অন্ধকার চিড়ে ওদের সামনে গিয়ে বললাম 'একটু আগুনটা দেবেন প্লিজ'। গল্পে বিভোর একজন আমার দিকে না তাকিয়েই দেশলাইটা এগিয়ে দিলেন। ঠোঁটে সিগারেট গুঁজে খশ করে কাঠি ঘষে আগুন জ্বালিয়ে সিগারেটটা ধরালাম। একটা লম্বা সুখের টান দিয়ে সবটুকু ধোঁয়া ছেড়ে দিলাম। এবার ভদ্রলোকটির দিকে দেশলাইটা বাড়িয়ে বললাম থ্যাঙ্কস্ দাদা। উনি ঘাড় ঘোরাতেই আমার হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা রাস্তায় পড়ে গেল। আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। আমার হাত পা গুলো অসম্ভব জোরে কাঁপছে। আমার পা দুটো এতটাই ভারী হয়ে এলো যে আমি হাঁটতে পারছি না। কোনোরকমভাবে বুকে সাহস সঞ্চয় করে অত্যন্ত ক্ষীণ কাঁপা কাঁপা স্বরে ওনার উদ্দেশ্যে বললাম 'বাবা তুমি এতরাতে এখানে?'
সমাপ্ত
© FB.com/profile.php?id=100027109367263