"এই ভাই,তুই এভাবে রাস্তায় বসে পড়লি কেন? চল, ওঠ। আমি কিন্তু বাড়ি গিয়ে মা কে বলে দেব কিন্তু।"
"না দিদি, আমি আজ আর বাড়ি যাব না। তোর যা ইচ্ছে, তুই তাই করতে পারিস। আমি আজ বাড়ি যাব না।"
"অমন করিস না ভাই, আজ তুই আমার কথাটা শেষ বারের মত শুনে নে, কাল থেকে আর আমি কিচ্ছু বলব না। তুই আমার সাথে না গেলে মা আমায় খুব বকবে। তুই কি চাস, মা আমায় বকুক? তা হলে যাস না। আর তুই না গেলে আমিও আজ ফিরব না। ঠিক আছে আমিও আজ রাস্তায় বসে থাকব। তারপর তোর যখন ইচ্ছে আমি তখনই বাড়ি ফিরব। মোদ্দা কথা হল তোকে না নিয়ে আমি বাড়ি ফিরব না আর কপিল দার পচা ঘুগনিও তোকে আমি কিছুতেই কিনে দেব না।"
"দে না দিদি, এক পাতা ঘুঘনি। খুব খেতে ইচ্ছে করছে। ওই দেখ, কেমন করে টিকিয়া বানাচ্ছে! দেখ, দেখ, কেমন করে তেঁতুল গোলা জল মেশাচ্ছে ঘুঘনিতে! ওফ, এই দেখ দিদি আমায়, জিভ দিয়ে লাল টসকাচ্ছে!দে না কিনে। আজ না হয় আমরা ঘুঘনি খেতে খেতে হেটেই বাড়ি যাব। প্লিজ দিদি।"
"না ভাই, মা আমায় বারণ করেছে। তোর মনে নেই, সেবার স্কুল থেকে ফেরার সময় তোর বায়নার জন্য দশ টাকার ঘুঘনি কিনেছিলাম, খুব মজা করে দুজন মিলে খেয়েও ছিলাম। কিন্তু তার পরের কথা গুলো মনে পড়লে আমার আজও কান্না পায় ভাই। সেবার ঘুঘনি খেয়ে বাড়িতে ফিরে কত বার বড় বাইরে গিয়েছিলিস মনে আছে? বাঁ হাতের জল পর্যন্ত শুকোচ্ছিল না। কি মনে পড়ছে? শেষ পর্যন্ত তোকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। মনে পড়ছে সেসব কথা? প্রথমে আমি বাবা, মা কে কিচ্ছু বলিনি, কিন্তু তোকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে, ভয়ে ঠাকুমাকে সব সত্যি কথা বলে দিয়েছিলাম, আর সেই শুনে বাবা আমায় কি বকান বকেছিল, সেসব মনে পড়লে আমার কান এখনো গরম হয়ে ওঠে। তাই বলছিলাম কি ভাই বাড়ি চল, মাকে বলব, রাত্রে ঘুঘনি বানাতে। তারপর যত খুশি তত খাবি, কেউ কিচ্ছু বলবে না।"
"কিন্তু দিদি, তুই তো নিজেও জানিস, বাড়ির ঘুঘনি, কপিলদার ঘুঘনির মত হয় না। ঠিক আছে তাহলে কি খাওয়া যায় বলতো? আজ আমায় কিছু না কিছু একটা খাওয়াতেই হবে বলে দিলুম, নইলে আমি কিচ্ছুতেই বাড়ি ফিরব না। ওই দেখ দিদি, আচারওলা আসছে, তা হলে পাঁচ টাকার হজমি গুলি আর কারেন্ট নুন কিনে দে!"
"হজমি গুলি? ঠিক আছে তাই দিচ্ছি, কিন্তু বাড়ি ফিরে মাকে বলবিনা কিন্তু! ও আচারওলা, এদিকে এসো।"
"কি নিবে, খুকি? খোকাবাবু কি নেবে? হজমি গুলি আছে, তেঁতুলের আচার আছে, আমড়া আছে, আমচূর আছে, কুলের আচার আছে। যা চাইবে তাই আছে, কোনটা দিব শুধু বলতে হোবে।"
"আজ বরং হজমি গুলি থাক, বরং আমরা তেঁতুল আর কুলের আচারটাই খাই, কি বলিস দিদি?"
"কুল খাবি?না, না, কুল এখন খেতে নেই মনে নেই? সামনেই তো সরস্বতী পুজো, তার আগে কুল খেতে নেই। মা বলে, তোর মনে নেই? তার আগে কুল খেলে মা সরস্বতী খুব রাগ করবেন কিন্তু, পরীক্ষায় গোল্লাও দিতে পারেন, তাই বলছি কি ভাই, আমার না, তেঁতুলের আচার খেতেই বেশি ইচ্ছে করছে। তাই দশ টাকারই তেঁতুলের আচার নিলে কেমন হয়?"
"দিদি, তোর তেঁতুলের আচার খেতে ইচ্ছে করলে তাই খা, আমি কুলের আচারই খাবো, তাতে আমি ফেল করলে তাই সই, তবু আমি ওই কুলের আচারই খাবো।"
"আচ্ছা, কাকু, আমাদের দুজনকে পাঁচটাকা করে, তেঁতুল আর কুলের আচারই দাও।
কিরে ভাই এবারে খুশি তো? বাড়ি ফিরে মাকে খবরদার বলবি না, এই বলে দিলাম। বললে কিন্তু তোর ফেল হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। স্বয়ং মা সরস্বতীও না!"
সমাপ্ত
© FB.com/arnab.kar.39