Keshukakar Chayer Dokan - A bengali story

Jolchobi

কেশুকাকার চায়ের দোকান

আকাশদীপ রাণা

কৌশিক মন্ডল, মানে আমাদের কেশুকাকার আজ মন খারাপ । আর হবে নাই বা কেন? যে ছেলেমেয়েগুলোকে এতদিন সামনে থেকে দেখেছে, তাদের সুখদুঃখের গল্প শুনেছে, যাদের তার দোকানে স্রেফ এক কাপ চায়ে ডুবে নির্ভয়ে প্রেম করতে দেখেছে, তাদের বিদায়ের দিনে কাকার মন খারাপ হবে না?!
হ্যাঁ, বিদায়ই বটে! তৃতীয় বর্ষের আজই শেষ ক্লাস ছিল যে! এরপর পরীক্ষা আছে, রেজাল্ট আছে, সার্টিফিকেট নেওয়া আছে, কিন্তু এভাবে আর কি কখনও তাদের দল বেঁধে তার দোকানে চা-বিস্কুট-অমলেট সহকারে আড্ডা দিতে দেখতে পারবে? পারবে ওই যুগলদের নিয়ে ইয়ার্কি মেরে পুরো ক্লাসের হাসিঠাট্টার আমেজ নিতে?
অবশ্য এসব আর নতুন কি? প্রতিবারই কেউ বিদায় নেয়, আবার নতুন কিছু মুখ এসে আড্ডা জমায় দোকানে। মুখ পাল্টায়, কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসাগুলো কোথাও একই রয়ে যায় ।
"আরে কাকা....আমাদের চা আর ডিমটোস্টটা আজ পাবো তো?" হাঁক দিল বিজয়।
"ওরে পাবি রে পাবি, অত তাড়া দিলে হয়? আজই তো বোধহয় শেষ আমার দোকানে, একটু নাহয় বসেই গেলি!"
হইহই করে উঠল আরও দু'তিনজন। "আরে কি বলছো কাকা!? তোমার দোকানে না এসে পারা যায়? মাঝেমাঝেই চলে আসবো দলবল নিয়ে।"
"আরে ছাড়! ওরকম কতো শুনেছি! নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে এসব ছুটকো জিনিস কারুরই মনে থাকে না!"
"আরে কাকার মনে হচ্ছে গোঁসা হয়েছে রে! ওরে বিতান , বউকে ছেড়ে এবার একটু কাকার মান ভাঙাও দেখি!"
বিতান আর শ্রেয়সী তখন পাশের বেঞ্চিতে দু'কাপ চা আর দুটো মাখন টোস্ট নিয়ে বসে জমিয়ে প্রেম করছিল। হঠাৎ এই কথা শুনে বিতান একটু হকচকিয়ে গেল। একটু অপ্রস্তুত হয়েই মুহূর্তে সামলে নিয়ে বলল,"আরে কাকার মান ভাঙাতে শুধু কাকিই পারবে! আমরা আর কে?!"
"আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই তো! আরে কাকা, কাকি কই? অনেকদিন আসছে না যে?"
"বাপের বাড়ি গেছে রে। কাল ফিরবে ।"
"ওও....তাই বলো! আমি ভাবলাম ছেড়ে চলে গেছে বুঝি!"
"ওরে আমাদের সম্পর্কগুলো না....অত আলগা নয় রে, বুঝলি? অত সহজে যাই না ছেড়ে!"
"শোন শোন শ্রেয়সী, শোন! কথায় কথায় ব্রেকআপ করিস! কাকির কাছ থেকে কিছু শেখ!" এবার বিতান সুযোগ বুঝেই খোঁচালো শ্রেয়সীকে ।
ওই মেয়েও ছাড়বার পাত্রী নয়! "এই শোন, ঝগড়াটা তুইই বাঁধাস, ঠিক আছে?! কথায় কথায় এভাবে খোঁচালে কিন্তু সত্যিই ব্রেকআপ করে নেবো!"
এবার বিতান প্রায় উকিলের ঢঙে বলল,"দেখেছেন ধর্মাবতার দেখেছেন? আপনাদের সামনেই প্রমাণ হয়ে গেল আমি ঠিক বলছিলাম!"
এই শুনে শ্রেয়সী মুহূর্তে চুপসে গিয়ে ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে লাগল। আর গোটা দোকান জুড়ে হাসির হিল্লোল উঠল ।
কাকা বিজয়দের ডিমটোস্ট আর চা দিতে দিতে বলল,"তা তোদের সেই ছেলেটা কই? সেই একটা লম্বা করে মেয়েকে নিয়ে আসতো? বসে বসে গিটার বাজিয়ে গান শোনাত তাকে!"
ওপাশ থেকে অহনা বলল,"সোহম তো? আর বলো না কাকা! সেই মেয়েটার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! তাই বেচারা পুরো মুষড়ে পড়েছে।"
বিজয়ের পাশে বসা রোহন ফুট কাটল,"তা তুই গিয়ে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দে! লাইন মারতিস তো খুব!"
"চুপ থাক! বাজে কথা বলবি না একদম!" ঝাঁঝিয়ে উঠল অহনা ।
আরও কথা এগোত কিন্তু হঠাৎ কাকাকে চুপ মেরে যেতে দেখে সবাই একটু থমকে গেল। কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকাল। তারপর মৈনাক একটু গলাখাঁকারী দিয়ে বলল,"কি হল কাকা? তুমি হঠাৎ থম মেরে গেলে যে?!"
হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরে পেল কাকা । নতুন করে চায়ের জল বসাতে বসাতে বলল,"না না, কিছু না! এমনিই আর কি!"
কিন্তু কলেজের পাকা ছেলেমেয়ের দল সেটা মানলে তো! অনেকবার অনেকেই কাকাকে লাগাত,"কি কাকা, তোমার জীবনের প্রেমটেম নিয়ে কিছু বলো?!" কিন্তু কাকা ঠিক রসিকতার ছলে এড়িয়ে যেত। কিন্তু আজ আর কোনও ছাড়াছাড়ি নেই! যেন শেষদিনে কাকার প্রেমকাহিনী শুনে যেতেই হবে!
"আরে কাকা, আজ বলেই দাও! ভিড়ও তো তেমন নেই। বলো বলো, আজ না শুনে ছাড়ছি না!" বিজয় কথাটা বলার সাথে সাথেই বাকিরাও হইহল্লা শুরু করে দিল,"হ্যাঁ হ্যাঁ, বলতে হবে বলতে হবে! নাহলে চায়ের দাম দেবো না!"
শুনেই কাকা গলা চড়ালো,"অ...তাই নাকি?! যাওয়ার দিনে রোজগারটাও মেরে যা আর কি! আচ্ছা শোন তবে...."
আর একপ্রস্থ হইহই চলল,"এইত্তো কাকা শোনাবে! জিও কাকা!"
অবশেষে এদের চেঁচামেচি শেষ হলে কাকা বলতে শুরু করল,"বুঝলি তখন ওই সব কলেজে উঠেছি আর কি! মনোহরপুর বলে একটা ছোট্ট গ্রামে থাকতাম, ওই তোর মেদিনীপুরের দাঁতন লাইনে। সে প্রায় একঘন্টা হেঁটে দূরের একটা কলেজে পড়তে যেতাম। নেকুরসেনি বলে একটা গ্রামের কলেজে।
তো একেই প্রত্যন্ত গ্রাম, তখন তো আর কলেজের পাশেই চায়ের দোকানটোকান তেমন থাকত না! তবে দোকান ছিল বেশ কিছুটা দূরে, রেলস্টেশনে ঢোকবার ঠিক মুখে । একটা ছোট্ট গুমটি মতো, আমরা সেখানেই আড্ডা বসাতাম। চা-টা যে সবদিন সবাই খেতাম তা নয়। অত পয়সা ছিল না! কিন্তু বেঞ্চে বসতে দিত । আড্ডা চলতো।
তো সেখানেই একদিন একটা মেয়ে এলো । সেরকম দারুণ কিছু দেখতে নয়। কিন্তু মুখে কেমন যেন একটা অদ্ভুত হাসি লেগে থাকত। তখন তো মেয়েদের চায়ের দোকানে দেখাই যেত না! কিন্তু সে আসত। চা খেত না যদিও, কিন্তু বিস্কুট, চকোলেট, কটকটি, এসব কিনতে অনেক সময়েই আসত । পরে জেনেছিলাম সেও আমাদের কলেজেই পড়ে! কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই দেখা হত ওই চায়ের দোকানে।
মাঝেমাঝে আমাকে চেয়ে দেখত জানিস? আমি আড়চোখে চাইতাম । একদিন সাহস করে এগিয়ে কথা বললাম। তখন বুকে তরুণ রক্ত!
ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব বাড়ল, একে অপরের অনেকটা কাছে এলাম । কলেজ কেটে দেখা করতে লাগলাম, এদিক ওদিক ঘুরতে নিয়ে যেতাম । আমাদের ঘোরা মানে আর কি, ওই এই জমি থেকে ওই জমি! কখনও কোনও আমবাগান, তো কখনও বাঁশঝাড়!"
এই অবধি বলে একটু থামল কাকা। বাকিরা তখন রসিকতায় ব্যস্ত । "আরে কাকা, এ তো পুরো সত্তর দশকের সিনেমা গো! তা বাঁশবাগানে ঘুরতে গিয়ে কখনও কোনও দাদুর লাঠি হাতে তাড়া খাওনি?!"
জোর হাসির হিল্লোল উঠল আবার। কেউ কেউ আবার প্যাঁক দিল,"কাকা হাতটা ধরেই ঘুরতে নাকি ছেড়ে?"
কাকা তখন একটা ধমক দিয়ে আবার বলতে শুরু করল,"এই তোদের এই ডেঁপোমি বন্ধ কর তো! না হাতটা আর ধরা হয়নি । আসলে কি জানিস, কোনওদিন একে অপরকে "ভালোবাসি"টাই বলা হলনা!"
"সে কি কাকা! তরুণ রক্তে টগবগ করতে করতে ওই একটা শব্দ বলতে পারলে না?! ছিছিছিঃ!"
"ওরে আমাদের সময় অত তাড়াতাড়ি সবকিছু হত না, বুঝলি? ধীরে ধীরে সম্পর্ক তৈরি হত। তোদের ওই কি বলে....স্লো বাট স্টেডি!"
"ওরে কাকা কি দিচ্ছে, কি দিচ্ছে! তা তারপর কি হল? মানে গল্পটা...."
"আহা বলতে দিলে তো বলবো! শোন। তো এভাবেই দিন কাটছিল । তারপর প্রায় একবছর এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে একদিন ভাবলাম,"নাহ্! এবার বলেই ফেলি!" কিন্তু....ওই যে বলে না? জীবন কখন কাকে কোথায় দাঁড় করিয়ে দেয়!"
"কেন? কি হয়েছিল কাকা?"
একটু উদাসীন হাসি হাসল কাকা। তারপর বলল,"সেই সময়েই বাবা মারা গেলেন । সংসারে টান পড়ল। পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেকেন্ড ইয়ারের পর আর টানতে পারলাম না। রোজগারের রাস্তা খুঁজতে হতো। এদিক-ওদিক টুকটাক কিছু কাজ করছিলাম, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শেষে কলকাতা চলে এলাম, একটা দোকানে কাজ করতে লাগলাম। মাসে মাসে টাকা পাঠাতাম। শুধু....." বলেই একটু চুপ করে গেল কাকা।
সবাই এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল মন দিয়ে। এমনকী সর্বদা মজা করা বিজয়ও কোনও টুঁ শব্দ করেনি । এবার সে বলল,"শুধু তাকে হারিয়ে ফেললে। তাই তো?"
আবার একবার মুচকি হাসল কাকা। হেসে বলল,"ইচ্ছে করেই আর যোগাযোগ রাখিনি রে। বাবা মারা যাওয়ার পর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। কি হতো আর কাউকে ভালোবেসে?! নিজেরই মাথায় ছাদ নেই, কে মেয়ে দেবে?? কিন্তু....কিন্তু কি হল জানিস?"
"কি হলোওও??" এবার সবাই একযোগে একরাশ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল ।
"ওই যে বললাম না, জীবন কখন কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায়?! সেই হল। কলকাতা চলে আসার বছরখানেক পরই শুনলাম মা মারা গেছেন। আমার আর কেউ রইল না গ্রামে। সেই মেয়েটিরও তখন আর খোঁজ নেই। খোঁজ করিওনি অবশ্য! সেই শেষবার । তারপর আর কোনওদিন গ্রামে ফিরিনি। কি হবে ফিরে? কেউই তো নেই আর!
তো তারও বছর আটেক পরে একদিন ট্রেনে চেপে শেওড়াফুলি যাচ্ছি একটা কাজে, হঠাৎ তাকে দেখলাম। বাদামভাজা নিয়ে হকারি করছে! ভাব একবার, সেই সময় একটা মহিলা ট্রেনে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করছে!
সাহস করে কাছে গেলাম। অনেকদিন পর এভাবে হঠাৎ দেখা হওয়ায় সেও বেশ অবাক। স্টেশনে নেমে একপাশে নিয়ে গিয়ে বসলাম। জানতে পারলাম, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এই শহরেই। কিন্তু বরের সাথে অশান্তির জ্বালায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে তিন বছর আগে! এখন এরকম হকারি করে, নিজের দায়িত্ব নিজেই নিয়েছে ।
শুনে তো আমি থ! এতদিন পর তাকে কাছে পেয়ে প্রায় কেঁদে ফেলি আর কি! সেও একরাশ অভিযোগ নিয়ে সমস্ত রাগ-অভিমান উগরে দিল । কেন ওভাবে দূরে সরে গেলাম? কেন তাকেও নিয়ে এলাম না? কেন তার একটা খোঁজ অবধি নিলাম না? সে কতো অভিযোগ!" বলেই আবার থামল কাকা ।
দোকানে বসা সবাই তখন একেবারে যাকে বলে, কান খাড়া করে শুনছে। চোখের সামনেই যেন নব্বইয়ের দশকের এক জীবন্ত রূপকথা!
"তারপর?? আরে থামলে কেন?? ও কাকা....!" সবার কৌতুহল ও উৎকন্ঠা তখন চরমে!
কিন্তু কাকা উত্তর না দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে । যেন এদের এতো আগ্রহ দেখে বেশ মজা পাচ্ছে!
"কি গো কাকা...." বলে বিতান যখন আর একবার হাঁক দিতে গেল, তখনই অহনার পাশে বসা আমি প্রথমবার মুখ খুললাম,"এক মিনিট! এক মিনিট! তাহলে কি আমাদের কাকিই সেই...."
সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে কাকার দিকে । ওদিকে কাকা উত্তর না দিয়ে শুধু মুচকি হেসে চলেছে। তাই দেখেই সবার আর বুঝতে বাকি রইল না যে তাদের কাকিই সেই মহিলা! বোঝা মাত্রই সবাই আবার হুল্লোড়ে মাতল,"আরে কাকাআআআ! জিওওওহ্! এ তো পুরো মাখন কেস! এক্কেবারে ভিন্টেজ প্রেমগাথা!"
অবশেষে কাকার মুখ খুলল,"এই তোদের মাখনটাখন রাখ তো এবার! কিছু কথা শিখেছে বটে! এবার যা, আরও খদ্দের আসছে ।"
"আরেহ্....কাকা লজ্জা পাচ্ছে! তা কাকা এটা কি এই চায়ের দোকান খোলার আগের কথা?"
"না তো কি? আরে এই দোকান তো আমরা দুজন মিলেই খুলেছি! নাহলে আমার একার দ্বারা হত নাকি? ওরে এ শুধু চায়ের দোকান নয় রে, এ আমাদের কাছে মন্দির! আমাদের ভালোবাসা, যন্ত্রণা, হাসি, কান্না, পাশে থাকা, সবকিছুর সাক্ষী এই চায়ের দোকানটা । বুঝলি কিছু?"
এবার আর কেউ কিছু বলল না । সবার মুখে একরাশ খুশির হাসি। যেন সদ্য এক অদ্ভুত রূপকথার গল্পের সাক্ষী হয়েছে তারা!
বিতান হঠাৎ শ্রেয়সীর হাতটা আঁকড়ে ধরল। তাই দেখে আবার বিজয়ের টিপ্পনি শুরু,"ব্যস অমনি ছুতো পেয়ে গেলে তো?! এক্ষুনি আবার চুমু খাবে! আর আমরা সিঙ্গেলরা সেটা বসে বসে দেখবো!!"
আড্ডা জুড়ে আবার হাসির হিল্লোল। ইয়ার্কি, ঠাট্টা, রসিকতা, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব সব মিলেমিশে একাকার। জানিনা আজকের এই বিকেল আর কোনওদিন ফিরে আসবে কিনা, কিন্তু এই চায়ের ঠেক, এই আড্ডা, এই বন্ধুত্ব, এই ভালোবাসা আজীবন স্মৃতির পাতায় সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে ।
সত্যিই তো, কিছু চায়ের দোকান শুধু দোকান নয়, রঙিন গল্পে মোড়া একটা আস্ত ডায়রি। যার প্রতিটা পাতা সাক্ষী থাকে এইরকম মনোরম কিছু বিকেলের। বড় বড় শপিং মল, ক্যাফেটেরিয়ার পাশাপাশি এই ছোট্ট চায়ের দোকানগুলোও বেঁচে থাকুক। বেঁচে থাকুক কেশুকাকা আর তাদের নির্ভেজাল ভালোবাসারা ।

সমাপ্ত

© FB.com/profile.php?id=100011500340879



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~