(১)
মোবাইলটা বাজতেই কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল। এত সকালে ফোন করেছে কে? তবু ফ্যান চালিয়ে ঠান্ডা আবহাওয়া তৈরি করে ,হালকা একটা চাদর দিয়ে থাকার মজাটা যারা করে তারা বুঝবে। তাই এরকম পরিস্থিতিতে আর হাত বের করে কে ফোন করেছে দেখার ইচ্ছে হল না।
কিন্তু না ,নিস্তার নেই। পাঁচ মিনিট পর আবার! উফ! কার যে কী হল কে জানে। এবার ফোনটা হাতে নিলাম আর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তের মধ্যে মাথায় আগুন জ্বলে উঠল, যদিও তার কারণ আর বেশি কিছু না, আমার মনে ছিল না মোবাইলের রিংটোন আর অ্যালার্মের সাউন্ডটা একই দেওয়া আছে, আর এখন ফোন আসেনি, অ্যালার্ম বাজছে। মনে হল চিৎকার করে উঠি ,কিন্তু দেখলাম পাশে রুমমেট খুব শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। তাই আর ওটা করা হল না। তাই সবচেয়ে সহজ কাজ অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।
আবার সেই একই সাউন্ড, আমি পুরোপুরি ঘুমিয়ে নেই, কিন্তু যাকে বলে অর্ধচেতন অবস্থা। আবার অ্যালার্ম!আর পারলাম না, তন্দ্রা ভাবটা কেটে যাওয়ায় দুটো অশ্লীল খিস্তি দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ,এবার ফোন এসেছে বাড়ি থেকে। ভাগ্যিস ফোন তুলে গরম ডালপুরীর মত গরম খিস্তি দিইনি, তা হলে যা হত! ফোনটা ধরতেই মা বলল,"উঠলি রে,আজ তো বললি কোথায় বেড়াতে যাবি।" কথাটা শুনতেই চটকা ভেঙে গেল। তাই তো! এবার ভালো করে তাকাতেই দেখলাম নটা বেজে গেছে। উঠে পড়লাম তাড়াতাড়ি। এতই তাড়া ছিল যে 'সকালের কাজটা'ও ঠিকমত হল না। সবথেকে রাগ উঠল এই দেখে যে রোহিত কখন উঠে নিঃশব্দে পড়তে শুরু করেছে। বললাম ," ঘড়িটার দিকে তাকা।" রোহিত আরও নিস্পৃহ,"জানি তো , আমি ,শুভম, রতন সবাই তো রেডি। তোর জন্য তো ওয়েট করছি।" না এবার মাথাটা ফেটেই যাবে রাগে, গামছা, সাবান আর শ্যাম্পু নিয়ে গেলাম বাথরুমে ,শুধু শুধু রেগে লাভ নেই।
তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ে বাসে উঠলাম।
এমনিতে আমি খুব শান্তশিষ্ট,এতটাই বেশি যে সামান্য পরিচিত,যাকে বলে মুখচেনা কাউকে দেখলে "কেমন আছেন?" বলার মত শিষ্টতাটুকুও হারিয়ে ফেলি। কিন্তু বাসভর্তি লোকের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও আমি আর আমার কোম্পানি যে ঠিক কিরকম আলোচনা করি বা করতে পারি সেটা জানান দিতে কোনো সংকোচ বোধ করি না, আমার নিজের বিষয়ে বলতে পারি হয়ত আমাকে দেখতে বাচ্চা বাচ্চা লাগায় আমি যে কলেজ ছাত্র সেটা প্রমাণ করতেই উঠে পড়ে লাগি। সে যাই হোক, প্রচুর উৎসাহ নিয়ে আর চিরাচরিত প্রেম ভালোবাসা নিয়ে একে অন্যকে ঠোক্কর মারতে মারতে এগিয়ে চললাম শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে।
(২)
কিন্তু বিষয়টা এরকম দাঁড়াবে সেটা মাথায় আসেনি। এত হাসাহাসি করতে করতে এসে শেষে যে এভাবে ব্যর্থ হব সেটা কি জানতাম? গিয়ে দেখলাম বন্ধ। তারপর মনে পড়ল দিনটা সোমবার। ছুটিটার উপলক্ষ্য ছিল ছাত্রদের ডাকা ধর্মঘট।আমরা যেহেতু সাধারণ ছাত্র তাই যে ধর্মের জন্যই এত ঘটা করে আয়োজন হোক না কেন আমাদের কাছে এটা সাধারণ ছুটির দিন ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই উপরি ছুটি হিসেবে আমরা ধর্মঘটকারীদের মনে মনে অত্যন্ত সাধুবাদ জানাচ্ছিলাম, কিন্তু সেটা এভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় মনে মনে মুণ্ডুপাত করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিলাম না।
মিনিট পনেরো ধরে আমাদের জানা সমস্ত নিকৃষ্ট কথাবার্তা কোনো অজ্ঞাত হতভাগ্য ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বর্ষণ করে যখন স্টক প্রায় শেষ তখন মনে হল গলাটা একটু ভিজিয়ে নেওয়া দরকার। আমি ব্যাগ থেকে বোতলটা বের করতে যাব ,তখনই বলে উঠল শুভম ,"চল না ডাব খেয়ে আসি, দেখ সামনেই বিক্রি হচ্ছে।"কথাটা কারোরই মনঃপুত হল না, কিন্তু শুভম এমনিতেই বেশি কথা বলে না, তারপর বেড়াতে যাবার প্ল্যানও ভেস্তে গেছে ,তাই আর কি ভাবলাম ,বলছে যখন তখন খেয়েই নি।কিন্তু দিনটা বোধহয় আমার জন্য নয়।খুব আসতে আসতে খেয়েও যখন দেখলাম যে আমারটাই আগে শেষ হয়ে গেল, তখনই বুঝলাম যে আমারটাতেই কম জল ছিল সবচেয়ে। তাই তাড়াটা আমিই দিলাম , ওইটুকু তো ডাব কতক্ষণ ধরে জল টানবি?
আবার বাস ধরলাম, এবার ফিরে যাবার। মন কারোরই ভালো নেই, এভাবে এসে ফাঁকা হাতে ফিরে যেতে কারই বা ভালো লাগে। হোস্টেলটা কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই। কলেজের গেটে বাস থেকে নামতেই মনটা যেন বিদ্রোহী হয়ে উঠল, ছুটিটা কি নষ্ট হবে? না,কক্ষনো নয়। বললাম,"চল তবে নিকোপার্ক থেকে ঘুরে আসি।"
শুনেই রোহিত বলল,"ধুর ,ধুর বাদ দে তো। এমনিতেই খুব টায়ার্ড লাগছে। আর যাওয়া যায় নাকি? চল না ঘরে গিয়ে ঘুমাবো।" আমি ততক্ষনে একরোখা হয়ে উঠেছি যে যখন বেরোতে বেড়িয়েছি তখন কিছু না কিছু তো ঘুরেই ঢুকব।তাই আমিও এখনই ঘরে যাব না। শেষ পর্যন্ত ঠিক হল যাব নিকোপার্ক। বাসে চেপে আবার রওনা দিলাম ,কিন্তু এবারের জার্নিতে উত্তেজনাটা একটু কম, হবারই কথা চোখের সামনে কর্ণেটো দেখিয়ে শেষে বাটি আইসক্রিম খাওয়া হয় তবে কি আর খুব ভালো লাগে?
তবু আমাদের মধ্যে যা কথা হচ্ছিল, সেটা আমাদের তথাকথিত 'হাই ভোল্টেজ' না হলেও সংক্ষিপ্ত কথা যে কি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে সেটা বুঝলাম। হঠাৎ রতন একটু জোরেই বলে উঠল "সেদিনের মালটা কী ছিল রে, পুরো জ্বলে গেল।" পাবলিক প্লেসে এরকম একটা কথায় নারী পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের দিকে তাকাল, কয়েকজন এমন দৃষ্টিতে দেখল যেন আমাদেরকে ব্রহ্মতেজে ভস্ম করে দেবে,যদিও আমাদের কোনো প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আসল কথাটা হল কদিন আগেই আমরা ফুচকা খেয়েছিলাম,দারুন ঝাল করেছিল। যাই হোক নিকোপার্কের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
(৩)
এই জায়গাটা অন্তত আমাদের বিট্রে করল না।এখানে এসে বুঝলাম প্রলোভন দেখিয়ে বোকা বানানো যায় কতভাবে। বেশ ঘটা করে লেখা আছে ১২ টা রাইড আছে টিকিটে অন্তর্ভুক্ত । কিন্তু ভিতরে গিয়ে বোঝা গেল যেগুলো তথাকথিত 'ফ্রি রাইড' নিতান্ত নির্বোধ শিশু আর 'টাকা যখন দিয়েছি তখন সবটুকু শুষে নেব' গোছের লোক ছাড়া কেউ চাপবে না, মনে হল সীতার মত ধরিত্রী মাতাকে বলি দুভাগে ভাগ হয়ে যেতে এ যে আর সহ্য করা যায় না। কিন্তু চিন্তাভাবনা অনুযায়ী সব এগোয় না।
বন্ধু যখন একটা রাইডে চাপছিল (যেটা আমার একদম পছন্দ নয়।)বললাম"তোরা থাক ,আমি একটু ঘুরে আসছি"। একেবারে মন্দ লাগল না, অনেক কিছু আছে দেখার। পরিবেশটাও বেশ সুন্দর।এমন সময়েই ঘটনাটা ঘটল, তেমন কিছু না আমার চোখটা একটা দিকে আটকে গেল। যুবক বয়স ,বোঝাবার কিছু নেই আমার চোখ কোনদিকে আটকে গেল সহজেই অনুমেয়। একটা মেয়ে বসে আছে চুপ করে যদিও সে আমার দিকে তাকিয়ে নেই। কিন্তু সেই সৌন্দর্যকে ব্যাখ্যা করতে আমি পারব না। তার দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরানো। আর সূর্যের আলো পড়ছে।কেবলই যেন মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকাবে, মনে অদ্ভুত দ্বন্দ্ব চলছে। একবার মনে হচ্ছে পুরোটা তাকালে হয়, পুরো সৌন্দর্য দেখতে পাব, আবার মনে হচ্ছে হয়ত কিছুটা রহস্যাবৃত থাকা ভালো। মিনিট পাঁচেক হয়ত ওই অবস্থায় ছিলাম। ভগবানের কী ইচ্ছে আমি জানি না, তবু মেয়েটা ঘুরল আমার দিকে, একটু হাসলও, আমিও কোনোরকমে হাসলাম,তবে আমার হাসিটার মধ্যে যে যথেষ্ট আড়ষ্টতা আছে সেটা নিজেও বুঝতে পারলাম।এইরকম পরিস্থিতিতে হঠাৎ কাঁধের ওপর একটা হাতের ছোঁয়া,আর মুখ ঘোরাতেই দেখলাম যে বন্ধুরা সবাই ফিরে এসেছে। শুভম বলল,"হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল চল এগোই।" আরেকবার সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম মেয়েটা কোথায় গেল? এই তো একটু আগেও সামনে বসে ছিল ।গেল কোথায় ও? নাকি আমার মনের ভুল?
মনের যে ভুল নয় সেটাও বুঝলাম একটু পরে । রোলারকোস্টার রাইডে চাপার সময় ভাবলাম আমরা চারজন আছি তো দুজন দুজন করে বসলেই হল,কিন্তু কপালে না থাকলে যা হয়। আমরা ছিলাম একদম শেষে। রোহিত আর শুভম গিয়ে বসে গেল একটা সিটে।কিন্তু আমার আর রতনের একসাথে বসার মত সিট ফাঁকা নেই। এমন সময় চোখে পড়ল একটা ফাঁকা সিটে ওই মেয়েটা বসে আছে।আমি বেশি ভাবনাচিন্তা না করে গিয়ে বসলাম ওর পাশে আর অন্যটায় রতন। জানি না রতন আমাকে দেখে হেসেছিল কিনা কিন্তু মেয়েটা যেন আমাকে নিশির ডাকের মত টানছে আমাকে। রাইডটা এখনো চলতে শুরু করেনি।হয়ত সংকোচবোধ ছিল,বা হয়ত এটা স্বাভাবিক যে আমি নিজে থেকে কথা বলা শুরু করিনি। মেয়েটাই বলল,
- হাই, তোমার নাম কী?
- তমঘ্ন রায়।
- ওরে বাবা, এ ত কঠিন নাম!
- বাবা, মা রেখেছে পাল্টানো তো যায় না
হেসে উঠল মেয়েটা । আমি জিজ্ঞেস করতে যাব ওর নাম ঠিক সেই সময়েই রাইডটা শুরু হল। কথা বলা আপাতত বন্ধ। অনেকে চিৎকার করছে রাইডে বসে, ভয়ে বলে মনে হল হল না , ওই যাকে বলে ওভারএক্সাইটেড। যেমুহূর্তে রাইডটা তার ট্র্যাকে নীচের দিকে নামা শুরু করল,পাশের মেয়েটা 'বাবা গো' বলে জড়িয়ে ধরল আমায়। তবে সত্যি বলতে এতে আমার মনের চাহিদা বেড়ে গেল, অন্তত আমি আশা করিনি। চাইলে এই দৃশ্যটার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে স্লো মোশনে পরিস্থিতিটা বর্ণনা করা যেতেই পারত, কিন্তু ব্যাপার হল আমরা তো তখনও রাইডেই, তাই অন্তত হ্যান্ডেলটা ধরে থাকতে হবে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সামলে নিল মেয়েটা। শেষে যখন থামল ,আমি বললাম
- প্রথমবার।
মেয়েটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।মানতেই হবে মেয়েটার সৌন্দর্য্য অনেক বেশি,কিন্তু ও জানে ঠিক কি করলে ওকে আরো অনেক বেশি সুন্দর লাগবে। যেমন হালকা করে হাসলে, মুখটাকে পাশ থেকে দেখলে,একদম বাচ্চা মেয়ের মত মাথা নাড়ালে ওকে খুব সুন্দর দেখায়। নিজেই বলল,"আমি তো একা এসেছি, তোমাকে কোম্পানি দিলে কোনো সমস্যা?"
- আমি তো একা নই ,আরো তিনজন বন্ধু আছে।
- তোমাদের আপত্তি না থাকলেই আমার নেই।
এরপর আর না করা যায় না । তবে খুব খটকা লাগল একটা জায়গায়, সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিলাম, কিন্তু ও যেন একটু বেশিই আমার গা ঘেঁষে আছে।
মোটামুটি রোহিত মিনিট পনেরো ধরে বলছিল,"ভাই বোটিং টা চাপি চল।" আমি তো বলেও দিয়েছিলাম, "পয়সা দিয়ে কেবল পাগলের মত পা চালিয়ে টায়ার্ড হবার কোন মানে হয়?" কিন্তু বারবার বলাতে আর না করতে পারলাম না।
দুর্ঘটনা বলে আসে না, এখানেও বলল না। পকেটে হাত দিয়েই বুঝতে পারলাম, ওয়ালেটটা নেই! সেটা বলতেই মেয়েটা নিজে থেকে আমাদের টাকা দিয়ে বলল,"এটা আমি দিচ্ছি, আমাদের বন্ধুত্বের নিদর্শন।" কেন ও বারবার আমার সাথে থাকতে চাইছে? একটা বোটে ও এর আমি ,অন্য বোটটায় বাকি তিনজন বসল।মেয়েটা যেন কেমনই , নিজে কাছে আসছে,অথচ আমাকে যেতে দেবে না কাছে ,যেন অদৃশ্য বলয়ে বেঁধে রেখেছে যা থেকে না দিচ্ছে এগোতে ,না পিছোতে।
(৪)
আমি নিজের দুর্বলতা স্বীকার করি, হ্যাঁ মেয়েটাকে আমি পেতে চেয়েছি । এটাকে আমার লোভ বললে বলবে আমার কিছু যায় আসে না। তবে শারীরিক চাহিদা আমার এখনও মাথায় আসেনি। আসলে মেয়েটার মানসিকতার সঙ্গে আমার প্রচুর মিল, কেমন যেন এক আত্মীয়তা খুঁজে পাই।তবু তো আলাদা হতেই হবে। তাই বেরিয়ে যাবার সময় শেষ একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। জীবনে তো সব পাওয়া যায় না। ধর্মতলা যাবার বাসে উঠে পড়লাম। কে জানে কেন বাসে খুব একটা ভীড় ছিলনা । জানালার ধারে সিটটা পেয়ে গেলাম। পাশে রোহিত বসল বটে কিন্তু ওর উপস্থিতি আমার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। আমার মন এখনো ওই মুহূর্তগুলোয় আবদ্ধ, আমাকে মানতেই হবে ,আমি ব্রহ্মচারী নই ,হতে পারে মেয়েটা অচেনা তবু.......হ্যাঁ তবুও ওর সঙ্গ আমার খুব ভালো লেগেছে। দেখতে সুন্দর হলেই ভালো লাগবে তা নয়, কথাবার্তাটাও খুব আকর্ষক।তবু নাম জানিনি ,আমার কাছে এক অজ্ঞাতপরিচয় মেয়ে হিসেব থেকে যাবে। বাসটা এসি। তাই জানালাগুলো বন্ধ। মুখটাকে রেখেছি জানালার কাচে ভর দিয়ে। রাস্তার ধারের দোকানগুলোয় জ্বালানো আলো যেন এক অবিচ্ছিন্ন আলোর স্তম্ভ গড়ে তুলেছে। ধীরে ধীরে সেগুলোও যেন অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তার জায়গায় ভেসে উঠছে সেই অল্প সময়ের মুহূর্তগুলো যেগুলো পুরো খুঁতহীন ছবির মত মনে ছাপ ফেলে রেখেছে। আরও কত মুহূর্ত......... কত মোহময়.........। হঠাৎই তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেল। রোহিত বলছে " অত মেয়ে দেখিস না।পকেট মেরে দিল বুঝতেও পারলি না । মেয়েটা কত ভালো দেখ, আমাদের টাকাটাও দিল,চেনা জানা নয় তাও ।" আমি হালকা করে মাথা নেড়ে আবার মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম । হ্যাঁ , মেয়েটা ভালো, তবু ও মানুষ ,ও ভুল করে । ওয়ালেটে পাঁচশ টাকা ছিল।আমি জানি আমার ওয়ালেটটা ওই নিয়েছে, হয়ত বুঝতে পারতাম না,কিন্তু যে ১০০ টাকার নোটটা ও দিয়েছিল সেটার একটা কোণা এমনভাবে একটু ছেঁড়া ছিল সেটা কেবল আমি জানি। আমি বুঝেছিলাম তাও কিছু বলিনি। আমি এখনো বুঝতে পারছি না যখন নিয়েই নিয়েছে তবে কেন বাকি সময়টা কাটাল আমার সাথে? কী দরকার ছিল এই সুন্দর মুহূর্তগুলো তৈরি করার । ও হয়ত ভাবেনি আমি জেনে যাব। আমি জানিনা ওর পরিবার আছে কিনা, জানিনা যা করেছে তাতে সামান্যতম ইমোশন ছিল কিনা।একবার মনে হল বলেই দিই বন্ধুদের, কিন্তু আটকে গেলাম, কী দরকার কারো সম্পর্কে মনোভাব পাল্টানোর? থাক না ভালো মেয়ে হিসেবে।আর আমার কাছে? ও এখনো একটা প্রশ্ন, যার উত্তর আমি পাব না । বড় দুর্বল হয়ে পড়ছি, পারছি না মনটা ঘুরিয়ে নিতে। চোখ দুটো বন্ধ হতে চাইছে,কিন্তু...... কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে আবার সেই দৃশ্যগুলো,তার সাথে ওয়ালেট, সব মিলে অমীমাংসিত এক আবর্ত। এখনো দেরি আছে পৌঁছাতে। দৃষ্টিক্ষেত্র ক্রমশ ছোট হচ্ছে, এখনো প্রশ্ন জাগছে মনে। ঘুমিয়ে পড়ার আগে শেষ যে প্রশ্নটা জেগে উঠল,'এই চিরউজ্জ্বল মুহূর্তগুলোর দাম কি পাঁচশো টাকাও হবে না?'
সমাপ্ত
© FB.com/subhradeep.mandal.18