আবার তুই সিগারেট ধরাচ্ছিস?
-- হ্যাঁ ধরাচ্ছি, হয়েছেটা কি?
(মুখটা বেঁকিয়ে কথাটা বলল অর্পণ)
রিয়ার চোখে যেন তখন আগুছ জ্বলছে।
দাঁতে দাঁত পিষে খুব গম্ভীর গলায় বলল -- জানিস কি এটা বিষ?
কতটা তোর ক্ষতি করছে, ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে রে তোর ভেতরটা অর্পণ।
অর্পণ, রিয়ার মুখের দিকে ধূঁয়োর গোল পিন্ডটা ছেড়ে খুব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল --
এটা বিষ নয়রে পাগলি, এটা হল অমৃত। আর তোর সবকিছুতে এত ন্যাকামি কেন বলতো? এই পার্কে এসে আর ন্যাকামী করিসনা। দে একটা কিস দে।
রিয়া মুখটা ঘুরিয়ে বলল --
ইস, ছিঃ.. কি বাজে স্মেল তোর মুখে। আচ্ছা তুই কি আমার জন্য আমাদের ভালবাসার জন্য এই বিষটা ছাড়তে পারবিনা? আমার জাস্ট অসহ্য লাগে এটা।
অর্পণ সিগারেটের বাক্সটা পকেটে ভরতে ভরতে রিয়ার হাতটা ধরে বলল -- একটু সয়ে নেনা ডার্লিং, আমরা হিউমান বিংস সবকিছুর হ্যাবিট করতে পারি।
অর্পণের হাতটা ছেড়ে এবার উঠে দাঁড়ালো রিয়া। অর্পণের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বলল --কলেজ না গিয়ে তোর জন্য, তোর সাথে এখানে আসা কারণ তোকে ভালবাসি বলে। কিন্তু এই বাজে দাবীগুলো মানতে আমি বাধ্য নই, তাই আসছি। বাড়ী ফিরতে হবে এবার।
অর্পনেরও একটা জিদ ধরে নিল, চিল্লে বলল -- হ্যাঁ হ্যাঁ, যাও যাও, বরাবরের জন্য চলে যাও।
রিয়া আর দাঁড়ালোনা। চলে গেল দ্রুতগতিতে।
সারাটা রাস্তা ভাবতে ভাবতে আসলো যে অর্পন হয়তো একটা কল বা মেসেজ করে সরি চাইবে।
কিন্তু না... সেসব কিছুই হলনা।
একলা ঘরে নিজেকে বন্দী করে খুব কাঁদলো। হাল্কা হয়ে নিল অপ্রত্যাশিত অশ্রুর জলে।
কাউকে ভালবাসার এই মাশুল, শুধু ওই বিষটার জন্য? -- জানলা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল ও।
উত্তর পেল ও কিছুক্ষন পর একটা আলোর ঝলকানি আর বিকট একটা বাজ পড়ার শব্দে, ওর মনের ভেতরেও এর মধ্যে অনেক কটা বাজ পড়ে গেছে, আর সব কটা উত্তর খুবি বাজে, বাজে....
পরেরদিন কলেজ গেল ও কিন্তু অর্পন ওকে দেখেও না দেখার ভান করে এরিয়ে যেতে লাগলো।
প্রচন্ড খারাপ লাগলো রিয়ার, ক্লাস করল না, ফিরে এল বাড়ী।
একাকী দুপুর নিজেকে ঘরবন্দী করে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করল ও।
পাঁচদিন কলেজ আসেনি রিয়া, ওর মোবাইলটাও বন্ধ। কি যে হল ওর। বাড়ীটা চেনে অর্পন, কিন্তু সাহস হলনা ওর যাবার।
খুব উদ্বিগ্ন মনে রিয়ার কথা বসে ভাবছিল পার্কের বেঞ্চে অর্পন।
খানিকটা দূরে পাশের বেঞ্চে একজন এসে বসল ওড়নাটায় মুখের একপাশটা ঢাকা, তাই ওকে দেখতে পেলনা অর্পন।
কিছুক্ষন পর ব্যাগ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বার করল মেয়েটা। কটা লম্বা টান, ধূঁয়োরা খোলা আকাশে তাথৈ তাথৈ নাচ জুড়ে দিল।
অর্পনের খুব রাগ হল মেয়েটার উপর। রাগভরা গলায় বলল --
কি বেহায়া মেয়েরা বাবা, ওপেন পার্কে বসে সিগারেট টানছে।
মেয়েটা খানিকটা কেশে বলল --
সয়ে নেনা ডার্লিং, হ্যাবিট কর।
গলাটা খুব চেনা ছিল অর্পনের,
দৌড়ে গেল মেয়েটার দিকে..
মেয়েটার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল --
রিয়া তুই? আর এই সিগারেট মানে বিষটা তুই? কি এইসব?
রিয়ার চোখটা লাল হয়ে এসেছিল, ঝাঁপসা চোখে বলল --
বিষ বলিসনা, এটা হল আদুরে বিষ। আমি তোর আদর চেয়েছিলাম, আর তুই এই বিষটা বেছে নিলি। তাই আমিও এটাই বেছে নিলাম।
নে নে একটা টান নে আদুরে বিষের..
-- সিগারেটটা রিয়া বাড়িয়ে দিল অর্পনের দিকে।
অর্পন সিগারেটটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলল -- চাইনা এরকম আদর, শুধু তোর আদর চাই রিয়া।
রিয়া ততক্ষণে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাবার মত অবস্থায় এসে পড়েছিল, অর্পনের কাঁধে মাথাটা এলিয়ে বলল --
খুব ভাল রে স্মেলটা, চারটে পৃথিবী দেখছি, সৌজন্যে আদুরে বিষ।
অর্পন ওর মুখের কাছে নিজের মুখটা গুঁজে হাঁউহাঁউ করে কেঁদে ফেললো.....॥
সমাপ্ত
© FB.com/sunil.boh